Sunday, July 6, 2025

কারবালার ১০টি ভুল বোঝাবুঝি – মিথ‍্যা বনাম সত্য











• অনেকে মনে করেন কারবালার ঘটনা ছিল সুন্নি ও শিয়া দ্বন্দ্ব।

প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল এক জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের এক সাহসী প্রতিবাদ। ইমাম হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন রসূল (সা.)-এর প্রিয় নাতি ও একজন সাহাবি, কোনো দলীয় নেতা নন। তিনি ছিলেন ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের সাথী।


• আশুরাকে কেবল শোকের দিন হিসেবে মনে করা হয়।

অথচ এই দিনটির ইতিহাস আরও প্রাচীন ও পবিত্র। এ দিনে আল্লাহ তাআলা মূসা (আ.)-কে ফেরাউনের জুলুম থেকে রক্ষা করেছিলেন। রসূল (সা.) কৃতজ্ঞতাবশত এই দিনে রোজা রাখতেন এবং তা এক বছরের গুনাহ মাফের কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। (সহীহ মুসলিম: ১১৬২)


• তাজিয়া, শোক মিছিল ও শরীর আঘাত করার মতো আচার অনেকের কাছে ধর্মীয় অনুষঙ্গ।

অথচ ইসলামে এমন কিছুর অনুমতি নেই। রসূল (সা.) ও সাহাবিগণ কখনও এভাবে শোক পালন করেননি। বরং দেহে আঘাত করা, উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা নিষিদ্ধ কর্ম। (সহীহ বুখারী: ১২৯৪) .


• ইমাম হুসাইনকে শুধু শিয়াদের নেতা হিসেবে ভাবা হয়।

কিন্তু তিনি ছিলেন সমগ্র উম্মাহর গর্ব, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রিয় নাতি এবং জান্নাতী যুবকদের সরদার। (সহীহ তিরমিযী: ৩৭৬৮) তাঁর ব্যক্তিত্ব সকল মুসলমানের কাছে অনন্য ও গ্রহণযোগ্য। 


• কারবালায় রসূল (সা.)-এর পরিবার সম্পূর্ণরূপে শহীদ হয়েছেন—এমন একটি ধারণা ছড়িয়ে আছে।

সত্য হলো, ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর কিছু সাহসী সাথী শাহাদাতবরণ করেন; পরিবারের অনেক সদস্য জীবিত ছিলেন এবং ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।


• বিশ্বাস করা হয়, আশুরায় বিশেষ রান্না না করলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে।

এটি একটি কুসংস্কার ছাড়া কিছু নয়। শরিয়তে এমন কোনো বিধান নেই। বরং বিশেষ খাবার রান্না করে তাকে বাধ্যতামূলক মনে করাটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।


• কেউ কেউ দাবি করেন, আশুরার রাতে আকাশে রক্তের দাগ দেখা যায়।

এ বিশ্বাসের কোনো ঐতিহাসিক, বৈজ্ঞানিক বা শরয়ি ভিত্তি নেই। এটি লোককথা ও অতিরঞ্জিত আবেগের ফসল।


• আশুরার রাতে মোম জ্বালানো, পানি বিতরণ, কবর জিয়ারতের মতো কাজকে বাধ্যতামূলক মনে করা হয়।

অথচ এসব রসূল (সা.) কিংবা সাহাবিদের কোনো আমল নয়। এগুলোকে ধর্মীয় আবশ্যকতা মনে করাটা একপ্রকার বিদআত।


• "ইয়া হুসাইন" বলে আহাজারি করলে গুনাহ মাফ হয়—এমন ধারণা প্রচলিত।

ইসলামে দুআ একমাত্র আল্লাহর কাছেই করতে হয়। কারও নামে সাহায্য চাওয়া শিরকের সীমানায় পড়তে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।


• অনেকে বিশ্বাস করেন, তাজিয়া মিছিলে অংশ নিলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।

ইসলামে এমন বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই। এটি বিদআতের আওতায় পড়ে এবং শিরকের আশঙ্কাজনক দরজাগুলোর একটি।


উপসংহার

কারবালার ঘটনা আমাদের শেখায় অন্যায়ের মুখে মাথা নত না করা, সত্য ও ইনসাফের পথে অবিচল থাকা। আমরা যেন আবেগে নয়, সহীহ জ্ঞান ও বিশুদ্ধ আমলের মাধ্যমে আশুরার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করে সঠিক পথের দিশা দিন।

সংগ্রহকৃত। 

কাজী দেলোয়ারুল আজীম 


Wednesday, June 4, 2025

নামাজ আসার অনেক পর মদ হারাম হয়েছে ।

 


ইসলাম পূর্ব যুগে এমনকি ইসলামের শুরুর দিনগুলোতেও মদ পানের প্রচলন ছিলো। আল্লাহ তায়ালা মোট চারটি ধাপে মদ হারাম করেন। 

প্রথম ধাপ 

আল্লাহ তায়ালা কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে ঘোষণা দিলেন যে, তোমরা খেজুর ও আঙ্গুর দ্বারা মাদক তৈরির পাশাপাশি উত্তম খাদ্য বস্তুও তৈরি করে থাক। যেমন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,

وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا

‘আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর হতে তোমরা মাদক ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক।’ (সূরা নাহল, আয়াত: ৬৭)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি মাদক হারাম করেননি, তবে জানিয়ে দিলেন, মাদক ভিন্ন জিনিস। আর উত্তম খাদ্যবস্তু ভিন্ন জিনিস। এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম ধারণা করে নিলেন যে, মাদক সম্পর্কে কোনো বিধান আল্লাহ তায়ালা অচিরেই নাজিল করবেন।

দ্বিতীয় ধাপ 

এরপর সাহাবায়ে কেরাম যখন মাদক সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন তখন আল্লাহ তায়ালা কোরআনের আয়াত নাজিলের মাধ্যমে তার প্রিয় হাবীবকে জানিয়ে দিলেন যে, মদের মাঝে উপকার ক্ষতি উভয়ই রয়েছে। তবে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি। কোরআনে এসেছে,

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِنْ نَفْعِهِمَا

‘তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, এ দু’টোয় রয়েছে বড় পাপ ও মানুষের জন্য উপকার। আর তার পাপ তার উপকারিতার চেয়ে অধিক বড়।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ২১৯)

এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সাহাবায়ে কেরামের অন্তরে মাদকের প্রতি কিছুটা ঘৃণার সৃষ্টি করে দিলেন। ফলে সাহাবায়ে কেরাম দু’দলে ভাগ হয়ে গেলেন। একদল ক্ষতির দিক বিবেচনায় তা বর্জন করলেন। আরেকদল চিন্তা করলেন, যেহেতু কিছুটা উপকার রয়েছে তাই তা গ্রহণে কোনো সমস্যা হবে না।

তৃতীয় ধাপ

এ পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিলেন, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজের কাছেও যাওয়া যাবে না। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে,

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى

‘হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা নামাজের নিকটবর্তী হয়ো না।’ (সূরা নিসা, আয়াত: ৪৩)

চতুর্থ ধাপ

এই আয়াতে সবসময়ের জন্য মদকে পরিষ্কার হারাম ঘোষণা না করায় অনেকেই নামাজের সময় বাদে অন্য সময় মদ গ্রহণ করতেন। ইতিমধ্যে ঘটে যায় আরও একটি ঘটনা। আতবান ইবনে মালেক (রা.) কয়েক সাহাবিকে দাওয়াত করেন। যাদের মধ্যে অন্যতম একজন অতিথি ছিলেন সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা.)। খাবার শেষে মদপানের প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। সেখানে আরবের প্রথা অনুপাতে কবিতা পাঠ ও নিজ নিজ বংশের গৌরবগাথা বর্ণনা শুরু হলে একজন মুহাজির সাহাবি আনসারদের দোষারোপ করে নিজেদের প্রশংসাকীর্তন করে আবৃত্তি করলেন একটি কবিতা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আনসারি এক যুবক উটের গলার একটি হাড় ছুড়ে মারেন তার মাথায়। 

মারাত্মকভাবে আহত হয়ে রাসুলের কাছে ছুটে যান তিনি। অভিযোগ করেন সেই যুবকের বিরুদ্ধে। তখন রাসুল (সা.) দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! মদ সম্পর্কে আমাদেরকে একটি পরিষ্কার বর্ণনা ও বিধান দান করুন, যাতে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিরসন হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা মদ-জুয়াকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করলেন।’ ‘হে ঈমানদাররা! মদ, জুয়া, মূর্তি ও তীর নিক্ষেপ এসব নিকৃষ্ট বস্তু ও শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা এগুলোকে বর্জন করো। যাতে তোমরা সফল হতে পারো। 

শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও তিক্ততা ঘটাতে চায় এবং তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে বিরত রাখতে চায়। তবুও কি তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে না!’ (সুরা মায়েদা : ৯০-৯১)। এই আয়াতে মদ ও জুয়াকে নিকৃষ্ট বস্তু ও ক্ষতিকর কাজ উল্লেখ করে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যখন নবীজির পক্ষ থেকে একজন ঘোষক মদিনার অলিগলিতে প্রচার করতে লাগলেন যে, মদপান হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তখন যার হাতে মদের যে পাত্র ছিল, তা তারা সেখানেই ফেলে দিয়েছিলেন। সেদিন মদিনায় এত পরিমাণ মদ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল যে, মদিনার অলিগলিতে বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট কাদাপানির মতো অবস্থা হয়েছিল এবং অনেক দিন পর্যন্ত মদিনার অলিগলির অবস্থা এমন ছিল, যখনই বৃষ্টি হতো, মদের গন্ধ মাটির ওপর ফুটে উঠত।’

 (তাফসিরে মায়ারেফুল কোরআন :

Monday, March 10, 2025

রমজানের শ্রেষ্ঠ দোয়া সমুহ আমল করতে পারা ভাগ‍্য ।


 





(কাজী দেলোয়ারুল আজীম)

রমজানে যে দোয়া বেশি বেশি পড়বেন

দোয়াও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। দোয়া ইবাদতের মূল। দোয়া ছাড়া ইবাদত অস্পূর্ণ থাকে। যে কোনো সময় যে কোনো দোয়া পড়া যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রসুল সা. আমাদের দোয়া শিখিয়েছেন।

রোজার দিন বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া। বিশেষ করে ইফতারের আগে আগে বেশি বেশি ইসতেগফার, দরূদ ও দোয়া পড়বেন।
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
 
- اَلْحَمْدُ للهِ اَللّهُمَّ إنِّيْ أسْئَلُكَ بِرَحْمَتِكَ الَّتِيْ وَسِعَتْ كُلَّ شَيْئٍ أنْ تَغْفِرَلِيْ উচ্চারণ : ‘আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’
 
অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)

রমজান জুড়ে বিশ্বনবির এ দোয়াগুলো বেশি বেশি করা জরুরি। আর তাহলো- اَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇﻧَّﻚَ ﻋَﻔُﻮٌّ ﺗُﺤِﺐُّ اﻟْﻌَﻔْﻮَ ﻓَﺎﻋْﻒُ ﻋَﻨِّﻲ উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।
 
সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
 
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
তাছাড়া 
নবীজী স: উপর দরুদ সর্ব অবস্থায় পড়া উপকার রয়েছে 
১০ টি রহমত প্রতি একবার দরুদে 
নবীজী স: বলেন তিনবার সুরা ইখলাস পাঠকরা কুরআন খতমের সোয়াব রয়েছে । 

সারা বছর ব‍্যস্ততার কারনে কুরআন পাঠ করা হয়না 
রমজানে ৭০ গুন বেশি সোয়াব অর্জন করা অফুরন্ত সুযোগ 
রয়েছে … । 
তাই আমরা রমজানের হক ও রোজার ফজিলত ও মাগফেরাত অর্জন করার চেষ্টা করি , মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন আমিন … 

কারবালার ১০টি ভুল বোঝাবুঝি – মিথ‍্যা বনাম সত্য

• অনেকে মনে করেন কারবালার ঘটনা ছিল সুন্নি ও শিয়া দ্বন্দ্ব। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল এক জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়ের এক সাহসী প্রতিবাদ। ইমাম হ...