Friday, June 14, 2024

আরাফা দিন শ্রেষ্ট দিন




 যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাহ ময়দানে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে অবস্থান করা হজ্জের প্রধান রুকন। এই দিনকেই আরাফার দিন বলা হয়। এ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও মর্যাদাপূর্ণ। এ দিনের গুরুত্ব ও ফযীলত সম্পর্কে নিম্নে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হ’ল।-

আরাফাহ দিবসের মর্যাদা :

এ দিবসটি অনেক ফযীলত সম্পন্ন দিবসের চেয়ে অধিক মর্যাদার অধিকারী। যে সকল কারণে এ দিবসটির এত মর্যাদা তার কয়েকটি নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

(১) এ দিন ইসলাম ধর্মের পূর্ণতা লাভ ও বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আল্লাহর নে‘মতের পরিপূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। হাদীছে এসেছে-

عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ أَنَّ رَجُلاً مِنَ الْيَهُودِ قَالَ لَهُ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، آيَةٌ فِى كِتَابِكُمْ تَقْرَءُونَهَا لَوْ عَلَيْنَا مَعْشَرَ الْيَهُودِ نَزَلَتْ لاَتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا. قَالَ أَىُّ آيَةٍ قَالَ (الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِى وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا). قَالَ عُمَرُ قَدْ عَرَفْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ وَالْمَكَانَ الَّذِى نَزَلَتْ فِيهِ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ قَائِمٌ بِعَرَفَةَ يَوْمَ جُمُعَةٍ.

‘তারিক বিন শিহাব (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ইহুদী লোক ওমর (রাঃ)-কে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনাদের কিতাবে আপনারা এমন একটি আয়াত তেলাওয়াত করে থাকেন যদি সে আয়াতটি আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হ’ত তাহ’লে আমরা সে দিনটিকে ঈদ হিসাবে উদযাপন করতাম। তিনি বললেন, সে আয়াত কোনটি? লোকটি বলল, আয়াতটি হ’ল-اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِيْنًا ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন বিধান হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। ওমর (রাঃ) এ কথা শুনে বললেন, আমি অবশ্যই জানি কখন তা অবতীর্ণ হয়েছে ও কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোথায় ছিলেন। সে দিনটি হ’ল জুম‘আর দিন। তিনি সে দিন আরাফার ময়দানে দাঁড়িয়ে ছিলেন’।[1]

(২) এ দিন হ’ল ঈদের দিন সমূহের একটি দিন। আবু উমামাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

يَوْمُ عَرَفَةَ وَيَوْمُ النَّحْرِ وَأَيَّامُ التَّشْرِيْقِ عِيْدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ وَهِىَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ-

‘আরাফাহ দিবস, কুরবানীর দিন ও আইয়ামে তাশরীক (কুরবানী পরবর্তী তিন দিন) আমাদের ইসলামের অনুসারীদের ঈদের দিন। আর এ দিনগুলো খাওয়া-দাওয়ার দিন’।[2]

ওমর (রাঃ) বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে দু’টো ঈদের দিনে। তা হ’ল জুম‘আর দিন ও আরাফাহর দিন।[3]

আরাফাহ দিবসের ফযীলত : আরাফাহ দিবসের বিভিন্ন ফযীলত রয়েছে। যেমন-

১. আরাফাহ দিবসের ছিয়াম দু’বছরের গোনাহের কাফফারা :

আরাফার দিন ছিয়াম পালন করলে এক বছর পূর্বের এবং এক বছর পরের গুনাহ মাফ হয়। আবু কাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আরাফাহ দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বলেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ إِنِّى أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِى قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِى بَعْدَهُ-

‘আরাফার দিনের ছিয়াম, আমি মনে করি বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হিসাবে গ্রহণ করা হয়ে থাকে’।[4] উল্লেখ্য যে, আরাফার দিনে ছিয়াম পালন করবেন তারাই যারা হজ্জব্রত পালন করেন না। অর্থাৎ আরাফাহ ময়দানের বাইরে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মুসলিম এই ছিয়াম পালন করবেন।

২. আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন :

এ দিনে আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যক মানুষকে ক্ষমা করে দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَنْ يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ثُمَّ يُبَاهِى بِهِمُ الْمَلاَئِكَةَ فَيَقُوْلُ مَا أَرَادَ هَؤُلاَءِ

‘আরাফার দিন আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর বান্দাদের এত অধিক সংখ্যক জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন, যা অন্য দিনে দেন না। তিনি এ দিনে বান্দাদের নিকটবর্তী হন ও তাদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দারা আমার কাছে কি চায়’?[5] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, এ হাদীছটি আরাফাহ দিবসের ফযীলতের একটি স্পষ্ট প্রমাণ।

ইবনে আব্দুল বার্র (রহঃ) বলেন, এ দিনে মুমিন বান্দারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হন। কেননা আল্লাহ রাববুল আলামীন গুনাহগারদের নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন না। তবে তওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা-প্রাপ্তির পরই তা সম্ভব। হাদীছে এসেছে-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম (ছাঃ) বলেছেন,

إِذَا كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ، إِنَّ اللهَ يَنْزِلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُبَاهِيْ بِهِمُ الْمَلائِكَةَ، فَيَقُوْلُ : انْظُرُوْا إِلَى عِبَادِيْ أَتَوْنِيْ شُعْثًا غُبْرًا- ‘যখন আরাফার দিন হয়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকটে গর্ব করেন। আল্ল­াহ বলেন, আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ। তারা এলোমেলো কেশ ও ধূলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে’


পবিত্র হাদীস গ্রন্থের অনুমোদিত আরাফার দিবসের আরো কিছু আমল

এছাড়াও আরাফার দিবসে নিম্নোক্ত আমলগুলো হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থে অনুমোদিত

  • গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের কামনা করা
  • অধিক পরিমাণে জিকির ও দোয়া করা
  • জোরে কিংবা আস্তে তাকবীর পাঠ করা মোস্তাহাব:
    1. আত-তাকবীরুল মুতলাক : যে তাকবীর যিলহজ মাসের ১ থেকে ১৩ই যিলহজ পর্যন্ত দিন রাতের যে কোন সময় / সর্বদা পাঠ করা যেতে পারে। 
    2. আত-তাকবীরুল মুকাইয়াদ : বা বিশেষ সময়ের তাকবীর। এ তাকবীর যিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রতি ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পরে তাকবীর পাঠ করতে হবে। 

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে এমন আমল করার তাওফীক দান করেন যাতে তিনি সন্তুষ্ট হবেন। তিনি যেন আমাদেরকে দীনের জ্ঞান দান করেন এবং ঐ সকল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেন যারা কেবল তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নেক আমল সম্পাদন করে।আমীন।


No comments:

Post a Comment

দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত

  দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত কাজী দেলোয়ারুল আজীম । Kazi Dalwarul Azim  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত ন...