Sunday, April 26, 2020

আয়তুল কুরছির ফজিলত


[কোরআনটাইম আয়াতুল কুরসি

কোরআনুল কারীমের দ্বিতীয়  বড় সুরা ‘সুরা বাক্বারাহ ২৫৫ নং আয়াতটি হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। আল্লাহর গুণবর্ণনায়  মর্যাদার দিক থেকে এটি কোরআনের সর্ববৃহৎ আয়াত [মুসলিমঃ ৮১০] হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়ফজিলত  মর্যাদায় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে এই আয়াতটি। এটি মহান আল্লাহর গৌরবময় গুণাবলীতাঁর সুউচ্চমর্যাদা এবং তাঁর পরাক্রমশালীতা  মহানুভবতা সম্বলিত সংক্ষিপ্ত শব্দে বহুল অর্থবিশিষ্ট অতীব মহান আয়াত।অনেকেই  সূরার আয়াতুল কুরসিতে “ইসমে আযম” আছে বলে মত দিয়েছেন।

এর অনেক ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমনএটা পড়লে রাতে শয়তান থেকে হিফাযতে থাকা যায়।প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পড়লে বেহেশত যাওয়ার পথে মরণ ছাড়া অন্য কিছু বাধা থাকে না (ইবনে কাসীর) ‘যেপ্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল-কুরসি নিয়মিত পাঠ করেতার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যুছাড়া অন্য কোন অন্তরায় থাকে না।’ [নাসায়ীদিন-রাতের আমলঃ ১০০

 আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতিগুনাবলী  বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ১০টি অংশ বর্নিত হয়েছে।

আসুনমর্যাদাপূর্ন এই আয়াতটি পড়ে নেই-

اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَـىُّ  لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ‌ؕ لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ‌ؕ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ‌ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَاَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ‌ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ‌‌ۚ وَلَا يَـــُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ‌ۚ وَ هُوَ الْعَلِىُّالْعَظِيْمُ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিমওয়া মা খালফাহুমওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বিওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ’আলিয়্যুল আজিম।
(বাংলা উচ্চারণটি কোরআনের আরবী উচ্চারণের সাথে যাচাই করে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া জরুরী)

অর্থ:-
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেইতিনি জীবিতসবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবংনিদ্রাও নয়। আসমান  যমীনে যা কিছু রয়েছেসবই তাঁরই। কে আছ এমনযে সুপারিশ করবে তাঁর কাছেতাঁরঅনুমতি ছাড়াদৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারাকোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে নাকিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষামহান।

কুরসি অর্থ কেউ বলেছেনমহান আল্লাহর জ্ঞান। কেউ বলেছেনশক্তি  মাহাত্ম্য। কেউ বলেছেন রাজত্ব এবংকেউ বলেছেন আরশ। তবে মহান আল্লাহর গুণাবলীর ব্যাপারে মুফাস্সীরদের নীতি হলতাঁর গুণগুলি যেভাবেকুরআন  হাদীসে বর্ণিত হয়েছেসেগুলির কোনরকম কল্পকাহিনীঅপব্যাখ্যা  ধরন-গঠন নির্ণয় না করেই তারউপর পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করা। কাজেই এটাই বিশ্বাস করতে হবে যেএই কুরসির ধরন  আকৃতি কেমন এবংতাতে মহান আল্লাহ কিভাবে আসীন হনতা আমাদের পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব না। কেননাযদিও তার অর্থ জানাসম্ভব হলেওকিন্তু তার প্রকৃতত্ব আমাদের কাছে সম্পুর্ন অজানা।

ইবনে কাসীর বলেনঃ  আয়াতটিতে দশটি বাক্য রয়েছে। প্রতিটি বাক্যের সাথেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা রয়েছে।

(প্রথম বাক্য (اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَঅর্থাৎ ‘তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতিত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই।’ এতে আল্লাহ শব্দটি অস্তিত্ববাচক নাম (لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَসে সত্তারই বর্ণনাযে সত্তা ইবাদাতের যোগ্য। মহান আল্লাহব্যতীত আর কোন সত্তা- ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। তিনিই একমাত্র হক মাবুদ। আর সবই বাতিল উপাস্য।

(দ্বিতীয় বাক্য (الْحَيُّ الْقَيُّومُঅর্থ্যাৎ ‘তিনি সদা জীবিত এবং বিদ্যমান।’ আরবী ভাষায় حَيٌّ অর্থ হচ্ছে জীবিত।আল্লাহর নামের মধ্য থেকে  নামটি ব্যবহার করে বলে দিয়েছে যেতিনি সর্বদা জীবিতমৃত্যু তাকে স্পর্শ করতেপারবে না। قَيُّوم শব্দ কেয়াম থেকে উৎপন্নএটা ব্যুৎপত্তিগত আধিক্যের অর্থে ব্যবহৃত। এর অর্থ হচ্ছে এই যেতিনিনিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। ‘কাইয়ূম’ আল্লাহর এমন এক বিশেষগুণবাচক নাম যাতে কোন সৃষ্টি অংশীদার হতে পারে না। তাঁর সত্তা স্থায়ীত্বের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। কেননাযে নিজের স্থায়ীত্ব  অস্তিত্বের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষীসে অন্যের পরিচালনা  নিয়ন্ত্রণ কি করে করবে

(তৃতীয় বাক্য لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ অর্থ্যাৎ ‘আল্লাহ তা'আলা তন্দ্রা  নিদ্রা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’ পূর্ববর্তী বাক্যেকাইয়ূম’ শব্দে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যেআসমান  যমীনের যাবতীয় বস্তুর নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছেন আল্লাহ্‌তাআলা। সমস্ত সৃষ্টিরাজি তাঁর আশ্রয়েই বিদ্যমান। এতে করে হয়ত ধারণা হতে পারে যেযে সত্তা এত বড় কার্যপরিচালনা করেছেনতাঁর কোন সময় ক্লান্তি আসতে পারে এবং কিছু সময় বিশ্রাম  নিদ্রার জন্য থাকা দরকার।পরবর্তী বাক্য দ্বারা সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে জানানো হয়েছে যেআল্লাহকে নিজের বা অন্য কোন সৃষ্টিরসঙ্গে তুলনা করবে নানিজের মত মনে করবে না। তিনি সমকক্ষতা  সকল তুলনার উর্ধ্বে। তাঁর পরিপূর্ণ ক্ষমতারপক্ষে এসব কাজ করা কঠিন নয়। আবার তাঁর ক্লান্তিরও কোন কারণ নেই। আর তাঁর সত্তা যাবতীয় ক্লান্তিতন্দ্রা নিদ্রার প্রভাব থেকে মুক্ত  পবিত্র।

(চতুর্থ বাক্য (لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِঅর্থাৎ ‘আকাশ এবং যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবই আল্লাহরমালিকানাধীন।’ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তির মালিক। যেভাবে ইচ্ছা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

(পঞ্চম বাক্য (مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِঅর্থাৎ ‘এমন কে আছে যেতার সামনে কারো সুপারিশ করতেপারেতার অনুমতি ব্যতীত?’ এতে বুঝা যায় যেযখন আল্লাহ্ তা'আলা যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর মালিক এবং কোন বস্তুতাঁর চাইতে বড় নয়তাই কেউ তাঁর কোন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকারী নয়। তিনি যা কিছু করেনতাতে কারোআপত্তি করার অধিকার নেই। তবে এমন হতে পারত যেকেউ কারো জন্য সুপারিশ করেতাই  বিষয়টিও স্পষ্টকরে দেয়া হয়েছে যে ক্ষমতাও কারো নেই। তবে আল্লাহর কিছু খাস বান্দা আছেনযারা তাঁর অনুমতি সাপেক্ষেতা করতে পারবেনঅন্যথায় নয়। যেমন হাদীসে এরশাদ হয়েছেরাসূল (সাঃবলেছেনঃ ‘হাশরের ময়দানেসর্বপ্রথম আমি সুপারিশ করব।’ [মুসলিমঃ ১৯৩একে ‘মাকামে-মাহমুদ’ বলা হয়যা শুধুমাত্র রাসূল (সাঃএরজন্য খাস। অন্য কারো জন্য নয়।

(ষষ্ঠ বাক্য (يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْঅর্থাৎ ‘আল্লাহ্ তা'আলা অগ্র-পশ্চাত যাবতীয় অবস্থা  ঘটনা সম্পর্কেঅবগত।’ অগ্র-পশ্চাত বলতে  অর্থও হতে পারে যেতাদের জন্মের পূর্বের  জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ঘটনাবলী আল্লাহর জানা রয়েছে। আর  অর্থও হতে পারে যেঅগ্র বলতে সে অবস্থা বোঝানো হয়েছে যা মানুষেরজন্য প্রকাশ্যআর পশ্চাত বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য। আয়াতের ব্যাপকতায় উভয়দিকই বোঝানো হয়।

(সপ্তম বাক্য (وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَঅর্থাৎ ‘মানুষ  সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের কোনএকটি অংশবিশেষকেও পরিবেষ্টিত করতে পারে না।’ কিন্তু আল্লাহ তা'আলা যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন শুধুততটুকুই সে পেতে পারে। এতে বলা হয়েছে যেসমগ্র সৃষ্টির অণু-পরমাণুর ব্যাপক জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানেরআওতাভুক্তএটা তাঁর বৈশিষ্ট্য। মানুষ অথবা অন্য কোন সৃষ্টি এতে অংশীদার নয়।

(অষ্টম বাক্য (وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَঅর্থাৎ ‘তাঁর কুরসি এত বড় যার মধ্যে সাত আকাশ  যমীনপরিবেষ্টিত রয়েছে।’ হাদীসের বর্ণনা দ্বারা এতটুকু বোঝা যায় যেআরশ  কুরসি এত বড় যেতা সমগ্র আকাশ যমীনকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। ইবনে কাসীর আবু যর গিফারী (রাঃ)এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনিরাসূল (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেকুরসি কি এবং কেমনতিনি (রাসূল (সাঃবলেছেনযার হাতে আমারপ্রাণ তার কসমকুরসির সাথে সাত আসমানের তুলনা একটি বিরাট ময়দানে ফেলে দেয়া একটি আংটির মত।আর কুরসির উপর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব যেমন আংটির বিপরীতে বিরাট ময়দানের শ্রেষ্ঠত্ব।’ [ইবনে হিব্বান৩৬১বায়হাকী৪০৫]

(নবম বাক্য (وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَاঅর্থাৎ ‘আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষে  দুটি বৃহৎ সৃষ্টিআসমান  যমীনেরহেফাজত করা কোন কঠিন কাজ বলে মনে হয় না।’ কারণএই অসাধারণ  একক পরিপূর্ণ সত্তার পক্ষে  কাজটিএকান্তই সহজ  অনায়াসসাধ্য।

(১০দশম বাক্য (وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُঅর্থাৎ ‘তিনি অতি উচ্চ  অতি মহান।’ পূর্বের নয়টি বাক্যে আল্লাহর সত্তা গুণের পূর্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে। তা দেখার এবং বোঝার পর প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলতে বাধ্য হবে যেসকলশান-শওকতবড়ত্ব  মহত্ব এবং শক্তির একমাত্র মালিক আল্লাহ তা'আলা। 

 দশটি বাক্যে আল্লাহর পরিচয়  গুনাবলীর পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত

  দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত কাজী দেলোয়ারুল আজীম । Kazi Dalwarul Azim  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত ন...