Thursday, May 28, 2020

বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও ১৪০০ বছর আগের কুরআন ।

বিজ্ঞানের আবিষ্কার ও ১৪০০ বছর আগের কুরআন ।


1️⃣ বিজ্ঞান কিছুদিন আগে জেনেছে চাঁদের নিজস্ব কোন আলো নেই।
(সূরা ফুরক্বানের ৬১ নং আয়াতে কোরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

2️⃣ বিজ্ঞান মাত্র দুশো বছর আগে জেনেছে চন্দ্র এবং সূর্য কক্ষ পথে ভেসে চলে
(সূরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে কোরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

3️⃣ সূরা কিয়ামাহ’র ৩ ও ৪ নং আয়াতে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগেই জানানো হয়েছে; মানুষের আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে মানুষকে আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যা আজ প্রমাণিত।

4️⃣ ‘বিগ ব্যাং’ থিওরি আবিষ্কার হয় মাত্র চল্লিশ বছর আগে। সূরা আম্বিয়া ৩০ নং আয়াতে কোরআনে এই কথা বলা হয়েছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে।

5️⃣ পানি চক্রের কথা বিজ্ঞান জেনেছে বেশি দিন হয় নি
(সূরা যুমার ২১ নং আয়াতে কুরআন এই কথা বলেছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

6️⃣ বিজ্ঞান এই সেদিন জেনেছে লবণাক্ত পানি ও মিষ্ঠি পানি একসাথে মিশ্রিত হয় না।
(২৫ সূরা ফুরকানের ৫৩ নং আয়াতে কোরআন এই কথা বলেছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

7️⃣ ইসলাম আমাদেরকে ডান দিকে ফিরে ঘুমাতে উৎসাহিত করেছে; বিজ্ঞান এখন বলছে ডান দিকে ফিরে ঘুমালে হার্ট সব থেকে ভাল থাকে ।

8️⃣ বিজ্ঞান এখন আমাদের জানাচ্ছে পিপীলিকা মৃত দেহ কবর দেয়, এদের বাজার পদ্ধতি আছে।
(কোরআনের সূরা নামল এর ১৭ ও ১৮ নং আয়াতে এই বিষয়ে ধারণা দেয়)

9️⃣ ইসলাম মদ পানকে হারাম করেছে , চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে মদ পান লিভারের জন্য ক্ষতিকর ।

🔟 ইসলাম শুকরের মাংসকে হারাম করেছে। বিজ্ঞান আজ বলছে শুকরের মাংস লিভার, হার্টের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

1️⃣1️⃣ রক্ত পরিসঞ্চালন এবং দুগ্ধ উৎপাদন এর ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান জেনেছে মাত্র কয়েক বছর আগে।
(সূরা মুমিনূনের ২১ নং আয়াতে কোরআন এই বিষয়ে বর্ণনা করে গেছে)

1️⃣2️⃣ মানুষের জন্ম তত্ব ভ্রুন তত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞান জেনেছে এই কদিন আগে।
(সূরা আলাকে কোরআন এই বিষয়ে জানিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

1️⃣3️⃣ ভ্রুন তত্ব নিয়ে বিজ্ঞান আজ জেনেছে পুরুষই ( শিশু ছেলে হবে কিনা মেয়ে হবে) তা নির্ধারণ করে। ভাবা যায়য়. (কোরআন এই কথা জানিয়েছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে।
(সূরা নজমের ৪৫, ৪৬ নং আয়াত, সূরা কিয়ামাহ’র ৩৭- ৩৯ নং আয়াত)

1️⃣4️⃣ একটি শিশু যখন গর্ভে থাকে তখন সে আগে কানে শোনার যোগ্যতা পায় তারপর পায় চোখে দেখার। ভাবা যায়? প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগের এক পৃথিবীতে ভ্রুনের বেড়ে ওঠার স্তর গুলো নিয়ে কোরআন বিস্তর আলোচনা করে। যা আজ প্রমাণিত !
(সূরা সাজদাহ আয়াত নং ৯ , ৭৬ সূরা ইনসান আয়াত নং ২)

1️⃣5️⃣ পৃথিবী দেখতে কেমন? এক সময় মানুষ মনে করত পৃথিবী লম্বাটে, কেউ ভাবত পৃথিবী চ্যাপ্টা, সমান্তরাল... কোরআন প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে জানিয়ে
গেছে পৃথিবী দেখতে অনেকটা উট পাখির ডিমের মত গোলাকার।

1️⃣6️⃣ পৃথিবীতে রাত এবং দিন বাড়া এবং কমার রহস্য মানুষ জেনেছে দুশ বছর আগে।
(সূরা লুকমানের ২৯ নং আয়াতে কুরআন এই কথা জানিয়ে গেছে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর আগে)

আমাদের সমস্যা হল আমরা সব কিছুই জানি... যারা নাস্তিক তারাও জানে... পার্থক্যটা হল 'বোধ' যেমন ধরুন একজন নেশাকর জানে যে নেশা করলেই তার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, যে ছেলে বাবা কে খুন করেছে সে জানে যে এই মানুষটি তাকে জন্ম দিয়েছে... সব জেনে শুনেই আমরা সব থেকে খারাপ কাজ গুলো করি...ব্যাপারটা অজ্ঞানতার না ব্যাপারটা 'বোধ' এর। আপনার  আমার এই বোধটা থাকতে হবে।

আল্লাহ্ বলেন..
ঐ ব্যাক্তির কথার চেয়ে কার কথা উওম যে নিজে সৎকর্ম করে এবং অন্যকে সৎকর্মের জন্য আহবান করে।
__________(সূরা হা-মিম সিজদাহ্-৩৩)        
                                                                                                    মুসলিম ভাই ও বোনদের প্রতি আহব্বান জানাই আসুন আমরা সবাই অর্থ বুজে কোরআন শিখি ও তেলাওয়াত করি ও আমাদের ছোট সোনামনিদের কুরআন মজিদ  শিক্ষা দেই।                                                             আল্লাহ্ সুবাহানাহু তা'য়ালা আমাদের কে কোরআন শিখার ও বেশি বেশি করে তেলাওয়াত করার তৌওফিক দান করুন- আমীন।

Thursday, May 14, 2020

জান্নাতে যাওয়ার রাস্তা


ইসলাম ডেস্ক-রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মিলে প্রতি’দানের অফুরন্ত সওয়াব। নেকি-পুন্যে ভারি হয় আমলের থলি। প্রতি’টি রোজা পালনের মাঝ দিয়ে আল্লাহর আনুগ’ত্যের পরিচয় দেয় বান্দা।
এর বিনিময়ে দয়া, অনুগ্রহ, রহমত, বরকতে পরিপূর্ণ করে দেয়া হয় আনুগত্যশীল বান্দাকে। রোজা শুধু আল্লাহর জন্য এবং তিনিই এ রোজার আমলের প্রতিদান দান করবেন ম’র্মে এক হাদিসে কুদ’সিতে ইরশাদ করেছেন, মানুষের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম তা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম -২৭৬০)।
এ হাদিস দ্বা’রা আমরা অনুধাবন করতে পারি, যাবতীয় নেক আমলের মাঝে রোজা রাখার গুরুত্ব আল্লাহর কাছে এতো বেশি যে, তিনি নিজেই রোজার প্রতিদান প্রদানের প্রতি’শ্রুতি দিয়েছেন। আর এ জন্যই বি’খ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) যখন বলেছিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অতি উত্তম কোনো নেক আমলের নির্দেশ দিন। রাসূল (সা.) বলেছিলেন, তুমি রোজা রাখো। কারণ এর সমমর্যাদার আর কোনো আমল নেই। (নাসায়ি-২৫৩৪)।
এছাড়া রাসূল (সা.) বলেছেন, মানব সন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আ’ল্লাহ তায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব। (মুসলিম-১৫৫১)।
রোজা জাহান্নাম থেকে বাঁচার ঢাল স্বরুপ :
হাদিসে এসেছে, রোজা হলো ঢাল ও জা’হান্না’মের আগুন থেকে বাঁচার মজবুত দুর্গ।(মুসনাদে আহমদ-৯২১৪)। আরো বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এক দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তার থেকে জাহান্নামকে এক খরিফ (৭০ বছরের) দূরত্বে সরি’য়ে দেবেন। (মুসলিম-২৭৬৯)।
জান্নাত লাভের মাধ্যম হলো রোজা :
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে। যার নাম রাইয়ান। কিয়া’মতের দিন রোজাদাররাই শুধু সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। সেদিন ঘোষণা করা হবে, রোজাদাররা কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে এবং সে দ’রজা দিয়ে প্রবেশ করবে। যখন তাদের প্রবেশ শেষ হবে, তখন দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে তারা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি-১৭৯৭)।
রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও উত্তম :
নবী করিম (সা.) বলেন, যার হাতে মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবন, সে স’ত্তার শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার কাছে মেশকের ঘ্রাণ থেকেও প্রিয়। (বুখারি-১৭৯০)।
কিয়ামতের দিন রোজা সুপারিশ করবে :
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, রোজা ও কোরআন কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সু’পারিশ করবে যে রোজা বলবে, হে প্রতিপালক! আমি দিনের বেলা তাকে পা’নাহার ও সহবাস থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যা’পারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। কোরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রে’খেছি, তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো। তিনি বলেন, ‘এরপর উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে।(মুসনাদে আহমদ-৬৬২৬)।
রোজার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয় :
মানুষ যখন পরি’বার-পরিজন, প্রতিবেশী ও ধন-সম্পদের কারণে গুনাহ করে ফেলে, তখন নামাজ, রোজা, সদকা সে গুনাহগুলোকে মিটিয়ে দেয়। (বুখারি-১৭৯৫)। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, যে রমজান মাসে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রোজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (বুখারি-২০১৪)।
কিয়ামতের দিন রোজাদারদের আল্লাহ তায়ালা পানি পান করাবেন :
হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তায়ালা নিজে’র ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গ্রীষ্মকালে (রোজা রাখার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।
রোজাদারের দোয়া কবুল হয় :
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ইফতারের সময় রোজাদার যখন দোয়া করেন তখন তার দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না। অর্থাৎ দোয়া কবুল কর হয়। (সুনানে ইবনে মাজাই, ১৭৫৩)।
এমাসে শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয় :
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাসের আগন ঘটলো, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমজান এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য এ মাসের রো’জা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা’সমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জা’হান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যান থেকে বিরত হলো, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বিরত। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস-৭১৪৮ সুনানে নাসায়ী-হাদিস-২৪১৬)।
রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস নেই :-
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তায়ালার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা, মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৮৩৬৮)।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন, মুমিন বান্দারা যাতে রমজান মা’সের অতি মূল্যবান ও বরকতপূর্ণ সময় নেক কাজে ব্যয় করতে পারে এবং মুনা’ফিকদের মতো খায়ের ও বরকত থেকে বিরত না থাকে, তাই আল্লাহ তায়ালা এ মাসের শুরু থেকেই সৃষ্টিজগতে এমন আবহ সৃষ্টি করেন, যা পুরো পরিবেশকেই রহমত-বরকত দ্বারা আচ্ছাদিত করে দেয় এবং মুমিনদের ইবাদত-বন্দেগি ও নেক আমলের উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাবে।
তাদের পূণ্য ও প্রতিদানের সুসংবাদ দিতে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং পাপাচার ও খারাপ কাজ হতে বিরত রাখতে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। সব ধরনের ফিতনা-ফাসাদ ও অনিষ্ট হতে রক্ষা করতে কুমন্ত্রণাদাতা দুষ্টু জিন ও শয়তানদেরকে শিকল লাগিয়ে আবদ্ধ করা হয়। তারপর কল্যাণের পথে অগ্রগামী হওয়ার ও অন্যায় থেকে নিবৃত্ত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখা :
হজরত হুযায়ফা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার বু’কের সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম, তারপর তিনি বললেন, যে ব্য’ক্তি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্য’ক্তি আল্লা’হর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোজা রাখবে, মৃত্যু পরে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর স’ন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সদকা করে; মৃ’ত্যু পর সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৩২৪)।
KDA বাংলা 

Sunday, April 26, 2020

আয়তুল কুরছির ফজিলত


[কোরআনটাইম আয়াতুল কুরসি

কোরআনুল কারীমের দ্বিতীয়  বড় সুরা ‘সুরা বাক্বারাহ ২৫৫ নং আয়াতটি হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। আল্লাহর গুণবর্ণনায়  মর্যাদার দিক থেকে এটি কোরআনের সর্ববৃহৎ আয়াত [মুসলিমঃ ৮১০] হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়ফজিলত  মর্যাদায় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে এই আয়াতটি। এটি মহান আল্লাহর গৌরবময় গুণাবলীতাঁর সুউচ্চমর্যাদা এবং তাঁর পরাক্রমশালীতা  মহানুভবতা সম্বলিত সংক্ষিপ্ত শব্দে বহুল অর্থবিশিষ্ট অতীব মহান আয়াত।অনেকেই  সূরার আয়াতুল কুরসিতে “ইসমে আযম” আছে বলে মত দিয়েছেন।

এর অনেক ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। যেমনএটা পড়লে রাতে শয়তান থেকে হিফাযতে থাকা যায়।প্রত্যেক ফরয নামাযের পর পড়লে বেহেশত যাওয়ার পথে মরণ ছাড়া অন্য কিছু বাধা থাকে না (ইবনে কাসীর) ‘যেপ্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল-কুরসি নিয়মিত পাঠ করেতার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যুছাড়া অন্য কোন অন্তরায় থাকে না।’ [নাসায়ীদিন-রাতের আমলঃ ১০০

 আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতিগুনাবলী  বৈশিষ্ট্য সম্বলিত ১০টি অংশ বর্নিত হয়েছে।

আসুনমর্যাদাপূর্ন এই আয়াতটি পড়ে নেই-

اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَـىُّ  لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ‌ؕ لَهٗ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْاَرْضِ‌ؕ مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ‌ؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَاَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ‌ۚ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَىْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ‌‌ۚ وَلَا يَـــُٔوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ‌ۚ وَ هُوَ الْعَلِىُّالْعَظِيْمُ

আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিমওয়া মা খালফাহুমওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বিওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ’আলিয়্যুল আজিম।
(বাংলা উচ্চারণটি কোরআনের আরবী উচ্চারণের সাথে যাচাই করে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেয়া জরুরী)

অর্থ:-
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেইতিনি জীবিতসবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবংনিদ্রাও নয়। আসমান  যমীনে যা কিছু রয়েছেসবই তাঁরই। কে আছ এমনযে সুপারিশ করবে তাঁর কাছেতাঁরঅনুমতি ছাড়াদৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারাকোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে নাকিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষামহান।

কুরসি অর্থ কেউ বলেছেনমহান আল্লাহর জ্ঞান। কেউ বলেছেনশক্তি  মাহাত্ম্য। কেউ বলেছেন রাজত্ব এবংকেউ বলেছেন আরশ। তবে মহান আল্লাহর গুণাবলীর ব্যাপারে মুফাস্সীরদের নীতি হলতাঁর গুণগুলি যেভাবেকুরআন  হাদীসে বর্ণিত হয়েছেসেগুলির কোনরকম কল্পকাহিনীঅপব্যাখ্যা  ধরন-গঠন নির্ণয় না করেই তারউপর পূর্ণাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করা। কাজেই এটাই বিশ্বাস করতে হবে যেএই কুরসির ধরন  আকৃতি কেমন এবংতাতে মহান আল্লাহ কিভাবে আসীন হনতা আমাদের পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব না। কেননাযদিও তার অর্থ জানাসম্ভব হলেওকিন্তু তার প্রকৃতত্ব আমাদের কাছে সম্পুর্ন অজানা।

ইবনে কাসীর বলেনঃ  আয়াতটিতে দশটি বাক্য রয়েছে। প্রতিটি বাক্যের সাথেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিক্ষা রয়েছে।

(প্রথম বাক্য (اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَঅর্থাৎ ‘তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতিত ইবাদতের উপযুক্ত আর কোনো ইলাহ নেই।’ এতে আল্লাহ শব্দটি অস্তিত্ববাচক নাম (لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَসে সত্তারই বর্ণনাযে সত্তা ইবাদাতের যোগ্য। মহান আল্লাহব্যতীত আর কোন সত্তা- ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। তিনিই একমাত্র হক মাবুদ। আর সবই বাতিল উপাস্য।

(দ্বিতীয় বাক্য (الْحَيُّ الْقَيُّومُঅর্থ্যাৎ ‘তিনি সদা জীবিত এবং বিদ্যমান।’ আরবী ভাষায় حَيٌّ অর্থ হচ্ছে জীবিত।আল্লাহর নামের মধ্য থেকে  নামটি ব্যবহার করে বলে দিয়েছে যেতিনি সর্বদা জীবিতমৃত্যু তাকে স্পর্শ করতেপারবে না। قَيُّوم শব্দ কেয়াম থেকে উৎপন্নএটা ব্যুৎপত্তিগত আধিক্যের অর্থে ব্যবহৃত। এর অর্থ হচ্ছে এই যেতিনিনিজে বিদ্যমান থেকে অন্যকেও বিদ্যমান রাখেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন। ‘কাইয়ূম’ আল্লাহর এমন এক বিশেষগুণবাচক নাম যাতে কোন সৃষ্টি অংশীদার হতে পারে না। তাঁর সত্তা স্থায়ীত্বের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নয়। কেননাযে নিজের স্থায়ীত্ব  অস্তিত্বের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষীসে অন্যের পরিচালনা  নিয়ন্ত্রণ কি করে করবে

(তৃতীয় বাক্য لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ অর্থ্যাৎ ‘আল্লাহ তা'আলা তন্দ্রা  নিদ্রা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।’ পূর্ববর্তী বাক্যেকাইয়ূম’ শব্দে মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যেআসমান  যমীনের যাবতীয় বস্তুর নিয়ন্ত্রণকারী হচ্ছেন আল্লাহ্‌তাআলা। সমস্ত সৃষ্টিরাজি তাঁর আশ্রয়েই বিদ্যমান। এতে করে হয়ত ধারণা হতে পারে যেযে সত্তা এত বড় কার্যপরিচালনা করেছেনতাঁর কোন সময় ক্লান্তি আসতে পারে এবং কিছু সময় বিশ্রাম  নিদ্রার জন্য থাকা দরকার।পরবর্তী বাক্য দ্বারা সীমিত জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে জানানো হয়েছে যেআল্লাহকে নিজের বা অন্য কোন সৃষ্টিরসঙ্গে তুলনা করবে নানিজের মত মনে করবে না। তিনি সমকক্ষতা  সকল তুলনার উর্ধ্বে। তাঁর পরিপূর্ণ ক্ষমতারপক্ষে এসব কাজ করা কঠিন নয়। আবার তাঁর ক্লান্তিরও কোন কারণ নেই। আর তাঁর সত্তা যাবতীয় ক্লান্তিতন্দ্রা নিদ্রার প্রভাব থেকে মুক্ত  পবিত্র।

(চতুর্থ বাক্য (لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِঅর্থাৎ ‘আকাশ এবং যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবই আল্লাহরমালিকানাধীন।’ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইচ্ছাশক্তির মালিক। যেভাবে ইচ্ছা তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

(পঞ্চম বাক্য (مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِঅর্থাৎ ‘এমন কে আছে যেতার সামনে কারো সুপারিশ করতেপারেতার অনুমতি ব্যতীত?’ এতে বুঝা যায় যেযখন আল্লাহ্ তা'আলা যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর মালিক এবং কোন বস্তুতাঁর চাইতে বড় নয়তাই কেউ তাঁর কোন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকারী নয়। তিনি যা কিছু করেনতাতে কারোআপত্তি করার অধিকার নেই। তবে এমন হতে পারত যেকেউ কারো জন্য সুপারিশ করেতাই  বিষয়টিও স্পষ্টকরে দেয়া হয়েছে যে ক্ষমতাও কারো নেই। তবে আল্লাহর কিছু খাস বান্দা আছেনযারা তাঁর অনুমতি সাপেক্ষেতা করতে পারবেনঅন্যথায় নয়। যেমন হাদীসে এরশাদ হয়েছেরাসূল (সাঃবলেছেনঃ ‘হাশরের ময়দানেসর্বপ্রথম আমি সুপারিশ করব।’ [মুসলিমঃ ১৯৩একে ‘মাকামে-মাহমুদ’ বলা হয়যা শুধুমাত্র রাসূল (সাঃএরজন্য খাস। অন্য কারো জন্য নয়।

(ষষ্ঠ বাক্য (يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْঅর্থাৎ ‘আল্লাহ্ তা'আলা অগ্র-পশ্চাত যাবতীয় অবস্থা  ঘটনা সম্পর্কেঅবগত।’ অগ্র-পশ্চাত বলতে  অর্থও হতে পারে যেতাদের জন্মের পূর্বের  জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ঘটনাবলী আল্লাহর জানা রয়েছে। আর  অর্থও হতে পারে যেঅগ্র বলতে সে অবস্থা বোঝানো হয়েছে যা মানুষেরজন্য প্রকাশ্যআর পশ্চাত বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য। আয়াতের ব্যাপকতায় উভয়দিকই বোঝানো হয়।

(সপ্তম বাক্য (وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَঅর্থাৎ ‘মানুষ  সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের কোনএকটি অংশবিশেষকেও পরিবেষ্টিত করতে পারে না।’ কিন্তু আল্লাহ তা'আলা যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন শুধুততটুকুই সে পেতে পারে। এতে বলা হয়েছে যেসমগ্র সৃষ্টির অণু-পরমাণুর ব্যাপক জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানেরআওতাভুক্তএটা তাঁর বৈশিষ্ট্য। মানুষ অথবা অন্য কোন সৃষ্টি এতে অংশীদার নয়।

(অষ্টম বাক্য (وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَঅর্থাৎ ‘তাঁর কুরসি এত বড় যার মধ্যে সাত আকাশ  যমীনপরিবেষ্টিত রয়েছে।’ হাদীসের বর্ণনা দ্বারা এতটুকু বোঝা যায় যেআরশ  কুরসি এত বড় যেতা সমগ্র আকাশ যমীনকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। ইবনে কাসীর আবু যর গিফারী (রাঃ)এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন যে, ‘তিনিরাসূল (সাঃ)কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যেকুরসি কি এবং কেমনতিনি (রাসূল (সাঃবলেছেনযার হাতে আমারপ্রাণ তার কসমকুরসির সাথে সাত আসমানের তুলনা একটি বিরাট ময়দানে ফেলে দেয়া একটি আংটির মত।আর কুরসির উপর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব যেমন আংটির বিপরীতে বিরাট ময়দানের শ্রেষ্ঠত্ব।’ [ইবনে হিব্বান৩৬১বায়হাকী৪০৫]

(নবম বাক্য (وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَاঅর্থাৎ ‘আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষে  দুটি বৃহৎ সৃষ্টিআসমান  যমীনেরহেফাজত করা কোন কঠিন কাজ বলে মনে হয় না।’ কারণএই অসাধারণ  একক পরিপূর্ণ সত্তার পক্ষে  কাজটিএকান্তই সহজ  অনায়াসসাধ্য।

(১০দশম বাক্য (وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُঅর্থাৎ ‘তিনি অতি উচ্চ  অতি মহান।’ পূর্বের নয়টি বাক্যে আল্লাহর সত্তা গুণের পূর্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে। তা দেখার এবং বোঝার পর প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলতে বাধ্য হবে যেসকলশান-শওকতবড়ত্ব  মহত্ব এবং শক্তির একমাত্র মালিক আল্লাহ তা'আলা। 

 দশটি বাক্যে আল্লাহর পরিচয়  গুনাবলীর পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত

  দুরূদ ও সালাম : ফায়েদা ও ফযীলত কাজী দেলোয়ারুল আজীম । Kazi Dalwarul Azim  আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, (তরজমা) নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত ন...